গ্রন্থ বিবরণ
যদি সাহিত্য থেকে কিছু নিতে না পারলাম তাহলে বলতে হয় পৃথিবীতে বাস করলাম প্রায় নরকে বাস করার মতোই। সাহিত্য থেকে কিছু নিতে পারলাম না, শিল্প থেকে নিতে পারলাম না, সংগীত থেকে নিতে পারলাম না, শুধু জীবনযাপন করে গেলাম, সে-জীবনযাপন গরুও করে, ভেড়াও করে, তার সঙ্গে মানুষের তফাৎ কী? আমি সাহিত্যকে সেই চোখে দেখি।’ – হাসান আজিজুল হক
ষাটের দশকের বাংলা কথাসাহিত্যের যে নবযাত্রা ঘটেছিল তার অন্যতম প্রাণপুরুষ ছিলেন হাসান আজিজুল হক। উত্তাল চল্লিশের দশকের প্রবেশমুখে রাঢ়বঙ্গে জন্ম নেওয়া এই খ্যাতিমান কিংবদন্তিতুল্য কথাশিল্পী দেশে-বিদেশে ঈর্ষণীয় আকর্ষণ কেড়েছেন পাঠক-সমালোচকের, অতিক্রম করেছেন একর পর এক সাফল্যের সিঁড়ি। তাঁর হাতে বাংলা ছোটোগল্পের বাঁকবদল ঘটেছে। ষাটের দশকেই কপালে তিলক পড়ে যায় ছোটোগল্পকার হিসেবে। যে অর্থে আমরা দেখি রবীন্দ্রনাথ মনন সমৃদ্ধ বিশাল গদ্যসাহিত্যের ভাণ্ডার গড়েও কবিই থেকে গেছেন, ভুলেও কেউ বলেন না ‘প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথ’, সৃষ্টির চৌদ্দ আনাই প্রেমে ভরে দিলেও ‘বিদ্রোহী কবি’র ছাপ কোনোদিনই মুছেনি নজরুলের কপাল হতে, তেমনি বুদ্ধদেব বসুর সমৃদ্ধ অনুবাদ, কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধ বেমালুম ভুলে ‘কবি বুদ্ধদেবে’র জয়জয়কার, তখন আমরা ধরেই নেই, হাসান আজিজুল হকের ক্ষেত্রেও একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।
অবিশ্বাস্য রকমের শোনাবে, হাসান আজিজুল হকের মতো এমন শক্তিমান মেধাসম্পন্ন মননশীল প্রাবন্ধিক গত পঞ্চাশ বছরের বাংলা গদ্যের ইতিহাসে হাতে গোনা দু’একজন হতে পারে। বাংলা প্রবন্ধের প্রচলিত ধারণাই তিনি পালটে দিয়েছেন। গল্পের মতো গতিশীল ক্ষুরধার ভাষা, প্রখর-তীব্র-টাটকা যুক্তি-চিন্তা দিয়ে গড়ে তুলেছেন তাঁর প্রবন্ধসাহিত্যের ঘরানা। নিজস্ব মেজাজ ও ঢঙে জলের মতো স্বচ্ছ ও সাবলীল করে হাসান আজিজুল হক এই পঞ্চাশটি প্রবন্ধে উপস্থাপন করেছেন দেশ, জাতি, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর মতামত । একজন সৃজনশীল সেলিব্রেটি লেখকের আমাদের ভাষা, সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে মতামত এবং নিজস্ব ব্যাখ্যা এই গ্রন্থের মূল উপজীব্য।
Reviews
There are no reviews yet.